– বদরুল ইসলাম বাদল
আজ 17এপ্রিল। জাতীয় ইতিহাসের একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করে।।এই ঘোষণাপত্র যুদ্ধকালীন সময় থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান প্রনয়ণ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান হিসেবে কার্যকর থাকে। ।কিন্তু দুঃখ এবং পরিতাপের বিষয় স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও জাতীয় অনেক বিষয় নিয়ে জাতির মধ্যে বিভক্তি এবং বিপরীত মুখী অবস্থান।এই বিভক্তি নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে তৈরির পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে ।এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বর্তমান সরকার,লেখক, শিক্ষাবিদদের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা আবশ্যক।জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.মশিউর রহমানের মতে,”লেখনিতে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের মাধ্যমে ইতিহাস বিকৃতি রোধ করতে হবে। লেখকের শক্তিমত্তাই প্রকৃত সত্যের কাছে নিয়ে যেতে পারে। “
আজকাল দেখা যাচ্ছে বর্তমান প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানার আগ্রহ বেড়েছে। পঁচাত্তরের পনের আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুদের দ্বারা সদ্যস্বাধীন দেশ শাসিত হয় দীর্ঘ একুশ বছর।জেনারেল জিয়া তার আমলে প্রধানমন্ত্রী, তথ্য মন্ত্রী সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারদের মন্ত্রী বানান ।বেগম খালেদা জিয়া একদাপ এগিয়ে বরিশালের আবদুর রহমান বিশ্বাসের মত পরিচিত রাজাকার কে প্রেসিডেন্ট বানান । তেমনি ভাবে স্বৈরাচারী এরশাদ ক্ষমতায় এসে তার অগ্রজ জেনারেল জিয়ার একই পন্থা অনুসরণ করে স্বাধীনতা বিরোধিতাকারী অনেক ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসান।ফলে একাত্তরে নিজেদের কুকর্মকে আড়াল করতে সে সময়ে রাষ্টীয় পর্যায়ে প্রতিনিয়ত ইতিহাস বিকৃতি করে তারা ।মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আড়াল করে মনগড়া ইতিহাস প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চেষ্টা করে।ফলে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও জাতীয় মৌলিক প্রশ্ন নিয়ে জাতি এখনো এক হতে পারে নাই।বঙ্গবন্ধুর নাম নিষিদ্ধ, আইন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করা হয়। স্বাধীনতার প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকারী পাকিস্তানপন্থিদের সাথে নিয়ে জিয়া, এরশাদ, খালেদা রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসে পাকিস্তানি এজেন্সির ভুমিকায় সকল ইতিহাস পাল্টে ফেলার পায়তারা চালিয়ে যায় ।ফলে সে সময়কার প্রজন্ম সত্যিকারের ইতিহাস থেকে বন্চিত হয়ে বিকৃত ইতিহাসে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আরোহনের পর চাপা পড়া ইতিহাস আলোর মুখ দেখা শুরু করে। ফলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষীয় সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে সত্যিকারের ইতিহাস জানার আগ্রহের ব্যাপকতা আসে তরুণ প্রজন্মের মাঝে। তাই মনে রাখার বিষয়, নতুন প্রজন্মের এই চেতনা বোধ কে ধরে রাখতে পারলে তাদের মাঝে দেশ প্রেমের ভিত্তি মজবুত হবে। প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য ইতিহাসের সঠিক সত্য ও সুন্দরকে জানার আরো সুযোগ দরকার অভিমত মনিষীদের। এনিয়ে তাদের মতামতে, “সমাজ সেই বদলাতে পারে যে ব্যক্তি নিজেদের ইতিহাস পড়েছে, যে নিজের ইতিহাস পড়েনি সে সমাজ তো দুরের কথা নিজেকে ও পরিবর্তন করতে পারবে না “”।
1970 সালের সাধারণ নির্বাচনে জনগণ শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়ী হয়।কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী শেখ মুজিবকে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে যান তিনি।1971সালের 25 মার্চ নিরস্ত্র জাতির উপর পাকবাহিনী গনহত্যা ও নির্যাতন শুরু করলে 26 মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে।স্বাধীনতা ঘোষণার কিছু সময় পরে পাকবাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় ।তখন শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ।মুক্তিযুদ্ধকে সঠিক ভাবে পরিচালনা এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহযোগী দলের হাই কমান্ড সীমান্ত পেরিয়ে জড়ো হয় কলকাতায় এবং তাদের মধ্যে সর্বসম্মতি সীদ্ধান্তে সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।সে চিন্তা থেকে ভারতের মাটিতে 1971 সালের 10 এপ্রিল গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম বিপ্লবী প্রবাসী সরকার গঠিত হয়। ভারতের মাটিতে গঠিত হলেও এই সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ভূখন্ডে। কুষ্টিয়ার সীমান্তবর্তী মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামকে মুজিবনগর নাম করণ এবং এই মুজিবনগরেই বিপ্লবী সরকারের শপথ হয়।পবিত্র কোরান তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানে, ” আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি, গানটি জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়।অনাড়ম্বর এই অনুষ্ঠানে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছৈয়দ নজরুল ইসলামকে দেওয়া হয় গার্ড অব অনার।স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করে গণপরিষদের স্পীকার ইউসুফ আলী।তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং মন্ত্রীদের শপথ বাক্য পাঠ করান। ব্যারিষ্টার আমিরুল ইসলাম কতৃক রচিত এই ঘোষণাপত্র টি পরে সংবিধানে সংযোজিত হয়।বঙ্গবন্ধুর 26শে মার্চের স্বাধীনতা ঘোষনা এবং মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত ঘোষনাপত্র যুদ্ধ কালীন সময়ের অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান হিসেবে গৃহীত হয়। এই সরকার ইতিহাসে মুজিবনগর সরকার হিসেবে সমধিক পরিচিতি লাভ করে।শপথ নেয়ার পর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেন এবং বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে বিশ্ববাসীর সহযোগিতা কামনা করেন শপথ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রধান প্রশ্ন ছিল,সরকারের প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোথায়? জবাবে ছৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই মন্ত্রীসভা গঠন করেছি।তাঁর সাথে আমাদের চিন্তার (বিস্তর)যোগাযোগ রয়েছে। “সাংবাদিকেরা জানতে চান,বাংলাদেশের রাজধানী কোথায়?জবাবে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, “মুজিবনগর”।
সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী জনপ্রতিনিধি নিয়ে সম্পুর্ন সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে এই সরকার গঠিন হয়। প্রকাশ্যে এবং নিজেদের ভূখন্ডে।বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করে তার অনুপস্থিতিতে ছৈয়দ নজরুল ইসলাম কে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, খন্দকার মোশতাক আহমদকে মন্ত্রীত্ব দেয়া হয়।পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা, যৌথ বাহিনীর সাথে সমন্বয়, দেশ বিদেশে ব্যাপক জনসমর্থন এবং সহানুভূতি আদায়, স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি পরিচালনা, এককোটি শরনার্থীর ত্রানের ব্যবস্থা করা সহ বঙ্গবন্ধুর মুক্তি নিয়ে এই সরকার অনেক দৃষ্টান্ত মুলুক কাজ করে। এই সরকারের কুটনৈতিক সাফল্যের ফলে যুদ্ধকালীন সময়ে ভূটান ও ভারতের স্বীকৃতি আদায় করতে সমর্থ হয়। ফলে বিশ্ব দরবারে কুটনৈতিক পাড়ায় বাংলাদেশ নিয়ে বিশেষ ভাবে আলোচনা শুরু হয়।বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচরদের প্রখর রাজনৈতিক দুরদর্শিতার স্বাক্ষর মুজিবনগর সরকার। মুজিবনগর সরকার গঠিত না হলে পাকিস্তান অপপ্রচারের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী অথবা বিদ্রোহীর তকমা লাগানো হতো । বিভিন্ন জাতির স্বাধীনতার ইতিহাসের পাতায় দেখা যায় যে ,1960 সালে কাতাঙ্গা যখন কঙ্গোর এবং 1967 সাথে বায়াফ্রা নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করলে তখন তাদের স্বাধীনতার ঘোষণাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করে সে দেশের শাসক গোষ্ঠী। ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের রাষ্ট্র রুপে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। আবার স্বাধীনতাকামী অনেক দেশ তাদের সুবিধামতো অন্য দেশে বসে বিপ্লবী সরকারের কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা যায় । যেমন ফিলিস্তিনের প্যালেষ্টাইন লিবারেশন ফ্রন্ট এর সদর দপ্তর স্থাপিত হয় প্রথমে বৈরুতে,পরে আম্মানে এবং সর্বশেষে ছিলো তিউনিসিয়া।কিন্তু এদের তুলনায় মুজিবনগর সরকার ছিল অনেকটা ব্যতিক্রম। কারণ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ভারতে এই সরকার গঠিত হলেও নিজেদের ভূখন্ডে 17 এপ্রিল 1971 সরকার শপথ গ্রহণ করে। মুজিবনগরকেই যুদ্ধকালীন সরকারের রাজধানী হিসেবে বিবেচিত হতো।তবে প্রকৃত পক্ষে কলকাতার 8 নম্বর থিয়েটার রোড়েই ছিল মুজিব নগর সরকারের অস্থায়ী অফিস । বিশ্বে বিভিন্ন দেশে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এরকম সরকারের অনেক নজির আছে। পোলান্ডের স্বাধীনতাকামী প্রবাসী সরকারের সদর দপ্তর ছিল লন্ডনে। প্রিন্স নরোদম সিহানুকের নেতৃত্বাধীন স্বাধীন কম্বোডিয়ান সরকারের সদর দপ্তর হয়েছিল বেইজিংয়ে। তাই মুজিবনগর সরকার বাঙলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ঐতিহাসিক ভাবে গুরুত্ব বহন করে। এই সরকারই বাংলাদেশের প্রথম সরকার, বৈধ এবং সফল সরকার।
1971 সালের 25 মার্চের রাতে পাকিস্তানি বাহিনী গনহত্যা শুরু করলে 26 মার্চ প্রথম পহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।এই প্রসঙ্গে পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজির তত্কালীন জনসংযোগ কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিক তার Witness to surrender গ্রন্থে লিখেছেন যে,”যখন প্রথম গুলিটি বর্ষিত হলো ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তান রেড়িওর সরকারি তরঙ্গের (ওয়েভ লেংনথ) কাছাকাছি একটি থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষীণ কন্ঠস্বর ভেসে এল।এই কন্ঠের বাণী মনে হল আগেই রেকর্ড করে রাখা হয়েছিল। তাতে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা করেন।ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কতৃক প্রকাশিত, বাংলাদেশ ডকুমেন্টস নথিপত্রে এই ঘোষণা বিস্তারিত সন্নিবেশিত করা আছে।আন্তর্জাতিক সকল প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ব মিডিয়া বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা করার তথ্য সংরক্ষিত আছে।
জেনারেল জিয়া জীবিতকালীন স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে নিজে কোন কথা বলেন নাই। তার মৃত্যুর পর বি এন পি হঠাৎ করে জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে দাবী নিয়ে আসে। শুধু তাই নয় স্বাধীনতার 43 বছরের পর লন্ডনে পলাতক জেনারেল জিয়া তনয় তারেক জিয়া এক সেমিনারে বলে,” জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীনতার ঘোষক”।বেগম খালেদা জিয়া ও জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্টপতি হিসেবে তারেক জিয়ার দাবীকে সমর্থন করেন।খালেদা জিয়া তার স্বামীর কাল্পনিক প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দাবী করায় কৌতুহলী হয়ে একজন পাঠক মন্তব্য করেন,”হাসলে নাকি মন ভালো থাকে ,তাই মাঝে মাঝে হাসির উপাদান দেওয়ার জন্য বি এন পি কে ধন্যবাদ”।আর তখনকার হাসিনা সরকারের তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তারেক জিয়ার কথার জবাবে বলেছেন, “যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপতির অধীনে মেজরের দায়িত্বে বহাল থেকে যুদ্ধ করেছেন তিনি । পরবর্তীতে উনি কর্ণেল হয়েছেন। সেনাবাহিনীর উপ প্রধান হয়েছেন, প্রধান হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা পরে নিজে নিজেই সামরিক শাসক হয়েছেন। সুতরাং জিয়াকে প্রথম রাষ্টপতি বলাটা একটি মিথ্যাচার”। স্বাধীনতার এত বছর পরেও এসব উদ্ভট প্রচারণা প্রজন্মের মাঝে বিভ্রান্তি, রাজনৈতিক অরুচি, অপরিপক্কতা কিংবা বালখিল্যতা হিসেবে মনে করে বিশেষজ্ঞ মহল। রাজনৈতিক সচেতন একজন নাগরিক হতাশা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, “একটি দলের নেতৃত্ব স্থানীয়রা কি ভাবে একটা দেশের ইতিহাস বিকৃতি করতে পারে, আর সেই দলটি ক্ষমতায় থাকলে দেশের ইতিহাস কোথায় গিয়ে ঠেকবে”?আসলে তা ভাবনার বিষয় নয় কি?আবার তারেক জিয়ার বিকৃত মস্তিষ্ক প্রসূত দাবিতে হতাশা হয়ে একজন চিন্তাবিদ তাঁর ঝাঁঝালো মন্তব্যে বলেন, ” ইতিহাস যাঁরা নির্মাণ করেন, তাঁরা কখনোই ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক করে না।করার প্রয়োজন ও হয় না। ইতিহাস নিয়ে তাঁরাই অহেতুক বিতর্ক করেন, ইতিহাসে যাদের অবদান রাখার ন্যুনতম সামর্থ্য ও সাহস নেই”।
যে কথাটি স্বীকার করে নিতেই হবে আজকের দিনে পরাজিত শত্রুরা গাপটি মেরে বসে আছে, তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় নাই।আছে সুযোগের অপেক্ষায়।দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় আছে বলে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলে বসে থাকলে হবে না আওয়ামী ঘরণাদের। রাজনৈতিক ভাবে দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে না পারলে কপালে অনেক দুঃখ আছে। ক্ষমতার হাত বদলের পর আদর্শিক কর্মী ছাড়া সকল হাইব্রিড সুযোগের পূজারী মৌসুমী পাখি গুলো সাইবেরিয়া উড়ে যাবে।তাই দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য মুক্তি যুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী কর্মীদের আদর্শিক দীক্ষা দিয়ে তৈরির দিকে বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া দরকার।স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে তর্ক,প্রথম রাষ্ট্রপতি নিয়ে নতুন তর্ক এসব উদ্ভট প্রচারণা অস্থির সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির চরম বার্তা। বি এন পি রাজনীতির দেওলিয়াপনার পরিচায়ক। তাই মুজিব নগর দিবসে আসল সত্যি কাহিনী তুলে ধরা সময়ের সাহসী ভূমিকা হওয়ার সবক হউক।সচেতন মহলের মতে , “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শুধু মুখে নয়, মনে প্রাণে তাদের প্রতিটি কর্মকাণ্ডই যেন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অনুরণিত হয়।মনে রাখতে হবে, সঠিক ইতিহাস জানা জরুরি শুধু সত্য কিংবা মিথ্যা নির্ণয় করার জন্য নয়।ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সত্যকে ন্যায়কে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য ও।” তাই বলা যেতে পারে যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন মুজিবনগর দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে আজীবন প্রেরণার উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে। জয় বাংলা।
———————-
কলামিস্ট ও সমাজকর্মী
সাবেক ছাত্রনেতা।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।